এই পৃথিবীর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য আর অপার রহস্য । সম্প্রতি কিছু জায়গা আবিষ্কৃত হয়েছে ,যেগুলো স্বয়ং বিজ্ঞানীদেরকেও বিস্মিত করে । এই জায়গা গুলো এতদিন ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে । একদল এডভেনচার প্রিয় মানুষ ও বিজ্ঞানীরা অভিযানে বেরিয়ে এই জায়গা গুলোর সন্ধান পায় । কিছু পর্যটক অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এই জায়গা গুলো দেখতে যাচ্ছে অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে । তাদের চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে এক নতুন দুয়ার, উন্মোচিত হচ্ছে এক নতুন জগত । পৃথিবীতে যে এত রহস্যময় জায়গা আছে, তা এতদিন ছিল মানুষের কল্পনারও বাইরে । Travel Treat youtube channel পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছে পৃথিবীর ১০ টি অজানা রহস্যময় জায়গা ।
১। বড় ক্রিস্টাল গুহা ,মেক্সিকো ঃ মেক্সিকোর জায়েন্ট ক্রিস্টাল গুহা বিখ্যাত এর অসাধারণ বিশাল আকৃতির প্রাকৃতিক ক্রিস্টালের জন্য । ২০০০ সালে মাইনরস এলয় এবং জেভিয়ার এটি আবিস্কার করেন । এটি মেক্সিকোতে অবস্থিত নাইসা মাইনের ৯৮০ ফুট নীচে অবস্থিত । নাইসা একটি লেড , জিঙ্ক ও সিল্ভার মাইন যেখানে একটি বড় গহবর আবিষ্কৃত হয় , সেখানে বিদ্যমান জিপ্সাম । এত বড় প্রাকৃতিক ক্রিস্টাল আগে কখনও দেখা যায়নি । এই গুহাটি অসম্ভব রকমের উত্তপ্ত । তাই সেখানে মানুষ প্রবেশ করতে পারে না । ভূতাত্ত্বিকদের স্পেশাল থার্মাল স্যুট পড়তে হয় , যার সাথে যুক্ত থাকে বরফের ব্যাগ ।
২। লেক হিলিয়ার , অস্ট্রেলিয়া ঃ লেকের পানি গোলাপি হয় এমন কখনও শুনেছেন কি ? পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া তে লেক হিলিয়ার নামে একটি লবণাক্ত লেক আছে , যার পানি সত্যিই গোলাপি । এর আকার দৈর্ঘ্যে ২০০০ ফুট এবং প্রস্থে ৮২০ ফুট । এই লেকের পানি সব সময়ই গোলাপি , ঋতুভেদে তা কখনও পরিবর্তিত হয় না । তাহলে লেকের পানিতে কি এমন পদার্থ আছে , যার কারণে লেকের পানির রং গোলাপি ? লেকের পানির উচ্চ মাত্রার সাথে যোগ হয়েছে সল্ট লাভিং শৈবাল প্রজাতি ডুনালিএলা সেলিনা এবং হেলো ব্যাকটেরিয়া নামে পিংক ব্যাকটেরিআর উপস্থিতি । এই কারনে লেক হিলিয়ারের পানির রঙ গোলাপি ।
৩। দ্যা হেলস অফ বেপু, জাপান ঃ জাপানের খুব কাছেই ভূগর্ভস্থ টেক টনিক প্লেট আছে , যার ফলে এখানে শুধু ভূমী কম্পই হয় না , এখানে উচ্চ মাত্রার ভল্কানিক সক্রিয়তাও বেশী । জাপানের কায়ুসু অঞ্চলে বেপু সিটিতে অধিকাংশ হট স্প্রিং ভল্কানিক বেল্টের ভেতর অবস্থিত । ভল্কান সংলগ্ন ভূগর্ভস্থ পানির উত্তপ্ত থাকে, সেখান থেকেই হট স্প্রিং গুলোর উৎপত্তি । বেপুতে প্রায় ২,০০০ হট স্প্রিং আছে , যেখান থেকে অনবরত গরম পানির বাষ্প বের হচ্ছে ।
৪. গেটস টু হেল , টার্কমেনিসস্থান ঃ টার্কমেনিসস্থান এ দারভাযা গ্যাস ক্রেটার কে বলা হয় গেটস টু হেল । কারন এই গভীর গর্তটি প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পরিপূর্ণ । এটি ২২৬ ফুট চওড়া এবং ৯৮ ফুট গভীর । এই ক্রেটারটি থেকে মিথেন গ্যাস লিক করছিল । সেজন্য সোভিয়েতরা গুহাটি জ্বালিয়ে রাখার সিধধান্ত নেয় , যাতে মিথেন গ্যাস ছড়াতে না পারে ।
৫। সালার ডি ইউনি , বলিভিয়া ঃ বলিভিয়ায় অবস্থিত সালার ডি ইউনি পৃথিবীর বৃহত্তম সল্ট ফ্ল্যাট বা লবণ সমতল । এটি ১১,০০০ কিমি. এলাকা নিয়ে বিস্তৃত । লবণাক্ত এই সমতলটি খুব পরিষ্কার পানি দ্বারা আবৃত থাকে , সেজন্য এটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম আয়না বলা হয় । প্রাচীন কালে এখানে একটি হ্রদ ছিল , যা পরবর্তীতে শুকিয়ে যায় এবং লবণের স্তর জেগে ওঠে। এটা যেন প্রকৃতির জাদুর এক উজ্জ্বল নিদর্শন ।
৬। হাভাসুপাই ওয়াটার ফলস, এরিজোনা ঃ এটি আমেরিকার এরিজোনাতে অবস্থিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এর কাছে এক দৃষ্টি নন্দন ঝরনা। এই ঝর্ণার নীল পানি ও পার্শ্ব বর্তী লাল পাহাড়ের কনট্রাস্ট এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে অবিরত নীচে গড়িয়ে পড়ছে বিশাল নীল জল রাশি ।
৭। গ্লাস বীচ , ফরত ব্রেগ, ক্যালিফোর্নিয়া ঃ উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ফরত ব্রেগ এর কাছে ম্যাক কেরি চার ষ্টেট পার্কে এমন একটি বীচ আছে , যা অন্য সব বীচের চাইতে ব্যতিক্রম । এই বীচে ছড়িয়ে আছে রঙিন আকর্ষণীয় সব পাথর । এটা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় । এই বীচটি ফরত ব্রেগের একটি আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট ।
৮। টানেল অফ লাভ, ইউক্রেন ঃ ইউক্রেনে ক্লিভান এরিয়ার কাছে একটি রেল লাইন আছে , যা সবুজ গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে একটি রহস্যময় প্রাকৃতিক টানেলে পরিণত হয়েছে । কাপল রা এই রোমান্টিক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে । এর জন্য এর নাম টানেল অফ লাভ ।
৯। ওয়াট কিন্স গ্লেন স্টেট পার্ক , নিউইয়র্ক ঃ নিউইয়র্কের ফিঙ্গার লেক এরিয়াতে ওয়াতকিন্স গ্লেন সবচেয়ে বিখ্যাত একটি স্টেট পার্ক। পাহাড়ের উপরে ও নীচে পাথরের রাস্তা ধরে হেঁটে হেঁটে দর্শনার্থীরা উপভোগ করে ১৯ টি ঝর্ণা , ২০০ টি ফুট ক্লিফ ও পাথরের খাঁজে খাঁজে বয়ে চলা পানির প্রবাহ । ঝর্ণার অবিরাম স্রোত ধারা ও পাথরের বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলা শীতল পানি , যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ।
১০। ফ্লাই গেসার , নেভাডা ঃ আমেরিকায় ব্ল্যাক রক ডেসার্টের কাছে অবস্থিত ফ্লাই গেসার বা উষ্ণ প্রসবন নেভাডা ষ্টেটের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা । মাটির গর্ত থেকে ছিটকে বের হওয়া গরম পানি ও ক্যালসিয়াম কার্বো নেট জমতে জমতে জন্ম নিয়েছে ছোট তিনটি পাহাড় । এদের মুখ থেকে অনবরত ৪/৫ ফুট উপর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে গরম পানির ফোয়ারা । পাহাড়ে সবুজ শ্যাওলা জন্মে থাকায় সবুজ লাল রঙে আরও মোহনিয় রূপ ধারণ করেছে এই উষ্ণ প্রসবন টি ।
আর ও বিস্তারিত জানতে ভিডিও টি দেখে নিতে পারেন
পৃথিবীর ভিবিন্ন দেশ সম্পর্কে জানতে আমাদের পেইজে লাইক এবং ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব
করতে ভুলবেন ।
সবাইকে ধন্যবাদ