জমে উঠেছে হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে আটঘাট বেধে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। চলছে গণসংযোগ, মিটিং, মাইকিং। পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকার অলিগলি।
দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সম্প্রীতির এ শহরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রচার প্রচারণায় ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই বিদ্রোহী মাঠে থাকায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। অপরদিকে একক প্রার্থী হওয়ায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।
এদিকে ভোটের মাঠে তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে মাঠে নামাতে শেষ মুহূর্তে তৎপর জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এ জন্য মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাও।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত জানান, নৌকা প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনার। যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে তারা নৌকার বিরোধিতা করতে পারে না। এখানে দুজন নৌকার বিদ্রোহী হয়েছেন। তাদের প্রতি আহ্বান জানাই যেন নির্বাচন থেকে সরে এসে নৌকায় উঠেন।
তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা সুবিধা করতে পারবেন না। মানুষ ভোটের বিপ্লব ঘটাবে। উন্নয়নের জন্য রোডম্যাপ করেছি। বিজয়ী হলে এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করবো।
বর্তমান পৌর মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহার ছোট ভাই এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ কুমার সাহা বলেন, জনগণের ইচ্ছা এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে প্রার্থী হয়েছি। দলের অনেক নেতাকর্মীও সঙ্গে রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এবার নির্বাচনে মেয়র পদে চার, কাউন্সিলর ৩৭ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে সাতজন প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবার নৌকা তুলে দিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীধাম দাশগুপ্তের হাতে। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক দুইবারের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. মুসলিম জগ প্রতীক নিয়ে ও গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহার ছোট ভাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত পংকজ কুমার সাহা নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহা অসুস্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তার ভাই ব্যবসায়ী পংকজ সাহা। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তবে বালু ব্যবসাসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। যদিও সে হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত অনেকটাই ক্লিন ইমেজের।
এদিকে বিএনপি থেকে বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক এবারও দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক জানান, সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সম্প্রীতির জন্য এ পৌরসভার ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে প্রর্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে কিন্তু প্রতিহিংসা নেই। এটি যেন অটুট থাকে।
তিনি বলেন, আমরা চাই নিরপক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মাধ্যমে যে-ই জয়ী হোক মেনে নেব। তবে সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানাই।
পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হাসান বলেন, নৌকা প্রতীক বিজয়ী করতে শেষ মুহূর্তে নেতাকর্মীরা একজোট হবেন। কারণ এ মার্কা শেখ হাসিনার। ভোটাররা উন্নয়নের জন্য অবশ্যই নৌকাকে বেছে নেবেন।
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ বলেন, ভোট সুষ্ঠু হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাই।
সুনীল দাস নামের এক ভোটার বলেন, শাহ মো. মুসলিম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ছাত্র জীবন থেকে জড়িত। দলের দুর্দিনের কান্ডারি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। তার আমলে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পৌরবাসী অবশ্যই তাকে মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুকোমল রায় বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে শুধু প্রতীক নয় জয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং পারিবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মেয়র পদ আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমানে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। ভোটার রয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮৭ জন।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএইচ/জিকেএস