বার্ড ফ্লু রোগের সংক্রমণ ও বিস্তাররোধে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও পাখি জাতীয় প্রাণী যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বার্ড ফ্লু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে এ রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যাতে এ হাঁস-মুরগি এবং পাখি জাতীয় প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখতে চিঠি দিয়েছে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিন মন্ত্রণালয়কে চিঠির বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা খুবই ইনিশিয়াল স্টেজে, যেহেতু ভারতে এটা (বার্ড ফ্লু) হয়েছে। সবসময়ই পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে ডিজিস হলে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেহেতু ভারতে দেখা গেছে, যদিও ভারতের অনেক দূরের রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে এটা আমাদের সংলগ্ন না। তারপরেও জেনেটিক ডিজিস এবং ট্রান্সবাউন্ডারি এগুলো যাতে বাংলাদেশে না আসতে পারে সেজন্য আমরা বলেছি এ সময়টাতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমাদের দেশে কোন হাঁস-মুরগি বা মুরগির বাচ্চা জাতীয় প্রাণীগুলো যাতে না আসে।’
রওনক মাহমুদ বলেন, ‘এগুলো না আসার সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তারা যেহেতু আমদানির বিষয়গুলো দেখে। তারপর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তারা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটা দেখে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোস্টগার্ড-বিজিবির দায়িত্বে। তাই এ ধরনের প্রাণী যাতে না ঢুকতে পারে সেজন্য পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদের চিঠি দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা একেবারে প্রাথমিক ব্যবস্থা, কারণ বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করি, এটা ঘটবেও না। তারপরও আমরা একটু সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখলাম আরকি। আমরা চিঠিতে সীমান্তবর্তী এলাকার কথা বলেছি, কোনো দেশের নাম বলিনি। যেই দেশে দেখা গেছে সেটা বলছি, কিন্তু সীমান্তবর্তী কথাটাই উল্লেখ করেছি। কারণ আমাদের ভারত ছাড়াও মায়ানমারের সঙ্গেও বাউন্ডারি আছে। সুতরাং এক দেশে হলে অন্য দেশে ব্যবস্থা না নিলে সেখানেও যেতে পারে। আমরা তাই শুধু পার্শ্ববর্তী দেশের কথাটি উল্লেখ করেছি।’
এর আগে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাসহ অন্যান্য জেলায় প্রতিদিন বার্ড ফ্লু রোগের অনুসন্ধান এবং সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-বেসরকারি খামারে নিবিড় তত্ত্বাবধানের জন্য চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোনো মৃত বা সন্দেহজনক হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত নিকটবর্তী ল্যাব থেকে পরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ চিঠিতে।
জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল ও গবেষণাগারে পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার কিট ও পিপিই জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ, খামারে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষক ও খামারিদের সতর্ককরণে ব্যাপক প্রচারণা চালানো, বার্ড ফ্লু প্রতিরোধকল্পে এর টিকার বর্তমান মজুদ যাচাই করে দ্রুততার সঙ্গে টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণেও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে এ চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
একই চিঠিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালুকরণ এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তা মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিতকরণের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
আইএইচআর/এমআরআর/এমকেএইচ