রীতিমতো রেকর্ড ভাঙার খেলায় মেতেছে দেশের পুঁজিবাজার। সূচকের মান আজ সাম্প্রতিক রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে তো কাল সেটিও পেছনে পড়ে যাচ্ছে—এমন ধারাই চলছে গত কিছুদিন হলো। গতকালও শেয়ার সূচকে বড় উত্থান দেখা গেছে। ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ উত্থান নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স জোরগতিতে ৬ হাজার পয়েন্টের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসসিএক্সও গতকাল বড় উত্থান দেখেছে। এদিন সূচকটি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
সূচকের পাশাপাশি গতকাল দেশের উভয় পুঁজিবাজারেই টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে। এছাড়া একদিনের ব্যবধানেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গতকাল লেনদেন শেষে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, আগের দিন যা ছিল ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১৯ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
৫ হাজার ৭১৯ পয়েন্ট নিয়ে গতকালের লেনদেন শুরু করেছিল ডিএসইএক্স। শেষ পর্যন্ত তা ৫ হাজার ৮৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। অর্থাৎ গতকাল সূচকটি বেড়েছে প্রায় ১৪২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ডিএসইএক্সের এ অবস্থান প্রায় দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি সূচকটির অবস্থান গতকালের চেয়ে বেশি ছিল (৫ হাজার ৮৮৪ পয়েন্ট)।
এদিকে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল প্রায় ২৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে দিনশেষে ১ হাজার ৩২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ২৯৭ পয়েন্ট। ডিএসইর ব্লু চিপ সূচক ডিএস–৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৭১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে গতকাল লেনদেন শেষে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন যা ছিল ২ হাজার ১২৪ পয়েন্ট।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৬৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১৯৫টির, কমেছে ১০৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬১টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। ১২ শতাংশ দখলে নিয়ে এরপর রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এছাড়া ১১ শতাংশ দখলে নিয়ে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, সামিট পাওয়ার লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে ছিল ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, বিবিএস কেবলস লিমিটেড, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।
এদিকে গতকাল ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ হলো এডিএন টেলিকম লিমিটেড, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দেশের আরেক শেয়ারবাজার সিএসইতে গতকাল প্রধান সূচক সিএসসিএক্স দিনের ব্যবধানে প্রায় ২৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবস শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৯ হাজার ৪৫ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৯১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮২টির, কমেছে ৭০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টির বাজারদর।
গতকাল দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ১ হাজার ৯৮২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এদিকে সিএসইতে গতকাল ৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।