মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায় (সিডিআরপি) প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুরে দুই ধাপে ২ হাজার ৩৬টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে আধা পাকা টিনসেট ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রথম ধাপে লক্ষ্মীপুরের চার উপজেলায় ‘ক’ শ্রেণীর (ভূমি ও গৃহহীন) ৩১০টি অসহায় পরিবারের মধ্যে এসব ঘর হস্তান্তরের কথা ছিল ২০ জানুয়ারি। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে ২০০টি ঘর হস্তান্তরের চিন্তা করছে প্রশাসন।
এদিকে সময় কমে আসায় তড়িগড়ি করে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের অভিযোগ করছে স্থানীয়রা। তাদের দাবি, ঘরগুলো হস্তান্তরের আর আছে মাত্র এক সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যে ২০০টি ঘরের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এতে অনেক ঘরেই ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া যেসব ঘর এরই মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব ঘরেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তাদের।
অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘর নির্মাণের জন্য উপযোগী খাস ভূমি নির্বাচন করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। তাছাড়া নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রথম ধাপের এসব ঘর নির্মাণ ও বণ্টন সম্পন্ন করতে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০২০–২১ অর্থবছরে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ে (সিডিআরপি) প্রকল্পে পুনর্বাসনের আওতায় দুই ধাপে জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩৬টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হবে। এতে প্রথম ধাপে লক্ষ্মীপুরে ভূমি ও গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণীর ৩১০টি পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার। বাকি ১ হাজার ৭২৬টি ঘর দ্বিতীয় পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে।
প্রতিটি গৃহহীন পরিবারের জন্য সরকারি খাস ২ শতাংশ ভূমিতে আধা পাকা টিনসেট ঘরে নির্মাণে ব্যয় হবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এ আধা পাকা টিনসেট ঘরে থাকছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি ইউটিলিটি কক্ষ। এছাড়া কক্ষ দুটির সামনে রয়েছে একটি বারান্দা। জেলা প্রশাসনের অধীনে এসব ঘর নির্মাণ কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া কমিটিতে আছেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচ সদস্য। তবে ঘর নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ অপ্রতুল বলে দাবি কর্মকর্তাদের।
সূত্রটি জানায়, প্রথম ধাপে লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে রামগতিতে ২০০, কমলনগরে ২০, রায়পুরে ২৫ ও সদর উপজেলায় ৬৫টি পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুধু রামগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ধাপে ঘর দেয়া হচ্ছে না। তবে রামগতি উপজেলার ২০০টি ঘর একত্রে নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
এ কারণ হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, খাস জমিগুলো উপকূলীয় এলাকায়। নিচু এলাকায় ঘর নির্মাণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই প্রথম ধাপে উদ্বোধনের জন্য মাত্র ২০টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
রায়পুর চরবংশি ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. বাবুল হোসেন মোল্লা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ২৫টি ঘর বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু ১৫–২০ ফুট নিচু জমিতে নিম্নমানের ঘর নির্মাণ করায় গৃহহীনদের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। নদীর জোয়ারের পানিতে ডুবে ও ঘর ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে ভেস্তে যেতে পারে সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা মো মাসুম বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মাটির নিচে মাত্র এক ইট পরিমাণ ভিত্তি দেয়া হয়েছে। বাতাসে মুহূর্তেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক থেকে দুই বছরের বেশি টিকবে না এসব ঘর। এ ঘরে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এ প্রকল্পের সভাপতি সাবরীন চৌধুরী। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরেট (সহকারী কমিশনার, এলএ শাখা) বনি আমিন বলেন, জেলায় প্রথম ধাপে ৩১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমিসহ পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০ জানুয়ারি জেলায় ২০০টি ঘরের উদ্বোধন করা হবে। তবে অধিকাংশ খাস জমিই নিচু, যা ঘর নির্মাণের উপযোগী নয়। নিচু ভূমি ভরাট করে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে যে ব্যয় হবে তা বরাদ্দের তুলনায় অপ্রতুল।