‘মৃত নন’ প্রমাণে আদালতের বারান্দায় তিন বছর

Jagonews24

রক্ত-মাংসের শরীরে এখনও প্রাণ আছে, দিব্যি সংসার করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরজুড়ে- এরপরও আদালতে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে টানা তিন বছর লেগেছে এক ফরাসি নারীর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ৫৮ বছর বয়সী ওই নারীর নাম জ্যঁয়ে পশেই। তিন বছর আগে তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন স্থানীয় একটি আদালত। সেই রায় যে ভুল ছিল, সেটা প্রমাণ করতেই তিন বছর ঘুরতে হয়েছে ফ্রান্সের সেন্ট-জোসেফ এলাকার এ বাসিন্দাকে।

জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে ফরাসি প্রশাসনের নাগরিক তালিকায় অস্তিত্ব ছিল না জ্যঁয়ে পশেইয়ের। অফিসের এক সাবেক সহকর্মীর মামলা থেকে শুরু হয়েছিল এই বিড়ম্বনা।

পশেই বলেন, আমি যে আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন, আমি জীবিত- এ বিষয়ে চিকিৎসকের সনদ থাকায় বিষয়টি তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এ নিয়ে আদালতে একটি রুল থাকায় তা হয়নি।

সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে প্রায় ১০ বছর ধরে চলা একটি মামলার রায়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে জ্যঁয়ে পশেইকে মৃত ঘোষণা করেন লিওনের আপিল আদালত।

Court

২০০৪ সালে ফরাসি শিল্প ট্রাইব্যুনাল পশেইকে নির্দেশ দেন, তার অফিসের সাবেক মেম্বর অব স্টাফকে ১৪ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে। বড় একটি চুক্তি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ওই কর্মীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মামলাটি কোম্পানির বিরুদ্ধে হওয়ায় সেই রুল কখনো কার্যকর হয়নি।

২০০৯ সালে ওই কর্মী আবারও মামলা করেন, তবে সেটিও আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ২০১৬ সালে পশেই মারা গেছেন ধরে নিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে ওই কর্মীর ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল আদালত। পরের বছর সেই সাবেক কর্মী শিল্প ট্রাইব্যুনালকে জানান, তার সাবেক বসের কাছে পাঠানো চিঠি ফেরত এসেছে, কারণ তিনি মারা গেছেন।

এই কথা বিশ্বাস করে সরকারি তালিকা থেকে পশেইয়ের নাম কেটে দেয়া হয়। বাতিল করা হয় তার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্বাস্থ্যবীমার মতো সবধরনের নথিপত্র- যেগুলো প্রমাণ করতে পারত যে, তিনি বেঁচে রয়েছেন।

পশেইয়ের দাবি, সাবেক ওই সহকর্মী তার স্বামী-সন্তানের কাছ থেকে অনৈতিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্যেই এই নাটক সাজিয়েছিলেন। তবে সেই কর্মীর আইনজীবীর অভিযোগ, পশেই ক্ষতিপূরণ দেয়ার ভয়ে নিজেই মৃত সাজার অভিনয় করে গেছেন।

শেষপর্যন্ত নিজেকে জীবিত প্রমাণের চেষ্টায় জিতেছেন জ্যঁয়ে পশেই। সম্প্রতি তাকে আবারও নথিভুক্ত করেছে ফরাসি প্রশাসন।

পশেই বলেন, আমি যদি না লড়ি, তবে আমার জন্য কেউ লড়বে না। আমার স্বামীর দাদির বয়স ১০২ বছর… তিনি যুদ্ধের মতো অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে গেছেন। তারপরও দাদি বলেছেন, আমি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি, এমন কষ্ট তিনিও কখনও ভোগ করেননি।

কেএএ/এমএস