নানামুখী সংকটে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি

Bonikbarta

পরপর তিন বছর মন্দার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর ২০২০ সালে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সূচনা প্রত্যাশা ওলটপালট করে দিয়েছে। বিদায়ী বছরের পূর্ণাঙ্গ রফতানি তথ্য এখনো প্রকাশিত না হলেও এটা স্পষ্ট যে করোনাকালে চালের বার্ষিক রফতানি লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি থাইল্যান্ড। তবে রফতানি লক্ষ্য পূরণ না হলেও সরবরাহ সংকট থেকে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। বাড়তি দাম থাই চাল রফতানি খাতকে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আরো পিছিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে খাতে নানামুখী সংকটের আবর্তে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। খবর রয়টার্স ব্যাংকক পোস্ট।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস ২০২০ সালের শুরুতে দেয়া এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, বছরজুড়ে থাইল্যান্ড থেকে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ টন চাল রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। এর আগের তিন বছর (২০১৭১৯) থাইল্যান্ডের চাল রফতানিতে ধারাবাহিক মন্দা ভাব বজায় ছিল। ২০১৭ সালে কোটি ১০ লাখ টনের বেশি চাল রফতানি করেছিল থাইল্যান্ড। যদিও তা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৮১ শতাংশ কম। পরের দুই বছর দেশটি থেকে যথাক্রমে ৭৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৫ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছিল। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ড থেকে চাল রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে কমেছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

তবে করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে চালের বার্ষিক রফতানি লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে রয়েছে থাইল্যান্ড। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারিনভেম্বর) থাইল্যান্ড থেকে ৫১ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম। একই সঙ্গে ২০০০ সালের পর বছরের প্রথম ১১ মাসে থাই চাল রফতানির এটাই সর্বনিম্ন রেকর্ড।

বিদায়ী বছরে চাল রফতানির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি দেশটির সরকার থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে রফতানিকারকদের সংগঠন বলছে, বার্ষিক রফতানি লক্ষ্য পূরণ করতে গত ডিসেম্বরে ১৯ লাখ টন চাল রফতানি করতে হতো থাইল্যান্ডকে। এটা অসম্ভব। গত এপ্রিলের পর থেকে মুদ্রাবাজারে থাই বাথের (স্থানীয় মুদ্রা) মান ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

বিষয়ে থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চোকিয়াত ওপহাসওংসি বলেন, একদিকে থাই বাথের শক্ত অবস্থান, অন্যদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে সরবরাহ কমে আসা দুই কারণে থাই চালের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তির দিকে ছিল। এর প্রভাব পড়েছে চাল রফতানিতে। আমদানিকারকরা বাড়তি দামের কারণে থাইল্যান্ডের পরিবর্তে ভারত কিংবা ভিয়েতনামের প্রতি ঝুঁকেছেন।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের (আইজিসি) তথ্য অনুয়ায়ী, গত ১০ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে চালের দামে রেকর্ড হয়। প্রতি টন রফতানিযোগ্য চাল বিক্রি হয় ৫০০ ডলারে। ২২ ডিসেম্বর নাগাদ তা টনপ্রতি ৫২৩ ডলারে উঠে যায়। প্রতি টন চালের দাম ৫২০ ডলারে অবস্থান করে চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবসে। তবে জানুয়ারি তা ফের বেড়ে ৫২৬ ডলারে উঠেছে। অথচ ভারতে রফতানিযোগ্য চালের দাম টনপ্রতি ৩৮০ ডলারের নিচে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ক্রেতারা চাল আমদানিতে থাইল্যান্ডের পরিবর্তে ভারতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ব্যাংকক।

নতুন বছরে সংকট আরো জোরদার করতে দেখা দিয়েছে পণ্য পরিবহনকারী কার্গো সংকট। এর জের ধরে রফতানি হওয়া চাল সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারছেন না থাই রফতানিকারকরা। চাল রফতানিতে জট বাড়ছে। একই সঙ্গে থাই চালের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ কমে আসছে। চোকিয়াত ওপহাসওংসি বলেন, কার্গো সংকট কাটিয়ে উঠে দ্রুত রফতানি খাতে গতি ফেরাতে না পারলে থাই চালের রফতানি বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়তে পারেন দেশটির রফতানিকারকরা।