নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ফের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে মালয়েশিয়ায়। গতকাল থেকে শুরু হয়ে এ জরুরি অবস্থা ১ আগস্ট পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সময়ে স্থগিত থাকবে দেশটির জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক আইন সভাগুলো। নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে লকডাউন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে সোমবার বৈঠক শেষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ। রাজপ্রাসাদ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত অথবা করোনা সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত এই জরুরি অবস্থা বহাল থাকবে। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
গতকাল সকালে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন। তিনি বলেছেন, জরুরি অবস্থার অধীনে জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদ স্থগিত থাকবে। এ সময়ে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেছেন, কোনো কারফিউ দেয়া হবে না এবং তার সরকারই অব্যাহতভাবে দেশ চালাবে। এর আগে সোমবার রাতে রাজাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, রাজার সম্মতিতে তিনি সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে আটটি রাজ্যে এবং ফেডারেল অঞ্চলে লকডাউন ঘোষণা করছেন। কারণ সেসব এলাকার হাসপাতালগুলো একেবারে ভেঙে পড়ার পরিস্থিতিতে রয়েছে। এই লকডাউনের অধীনে রয়েছে রাজধানী কুয়ালালামপুর, রাজ্যের মধ্যে সাবাহ, সেলাঙ্গর, পেনাং ও যোহর। এসব স্থানে লকডাউন ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এদিকে কঠোর লকডাউন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণায় উদ্বিগ্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীগোষ্ঠী। এসএমই অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট মাইকেল ক্যাং বলেন, আরো দুই মাসের জন্য যদি লকডাউন বহাল থাকে, তাহলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এসএমই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকার কার্যকর বেতন ও ভাড়া সহায়তা দেবে এমন প্রত্যাশা তাদের। গত বছর মালয়েশিয়া যখন কড়া লকডাউন আরোপ করেছিল তখন এসএমই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন ২৪০ রিঙ্গিত লোকসান গুনেছিল। মার্চ থেকে জুলাইয়ে চলা ওই লকডাউনে এসএমইগুলোকে ১ হাজার কোটি রিঙ্গিত সহায়তা দিয়েছিল সরকার।
এর আগে তিন মাসের কঠোর লকডাউন দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছিল মালয়েশিয়া। এ সময়ে লোকজনকে ঘরের বাইরে বেরোতে দেয়া হয়নি। গত বছরের জুলাইয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে সেপ্টেম্বরে। এ সময়ে সাবাহ রাজ্যের বোর্নিওতে নির্বাচন হয়। সেখানে করোনা সংক্রমণ নতুন করে দেখা দেয়। করোনার বিস্তারের মধ্যেই সেখানে নির্বাচন হয়।
ফের লকডাউন আরোপের ফলে বেকারত্ব বাড়বে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ। ব্যাংক ইসলাম মালয়েশিয়ার চিফ ইকোনমিস্ট আফজানিজাম আবদুল রশিদ বলেন, কঠার লকডাউনে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হবে। তবে তিনি আশা করেন, গত বছরের মতো বিপর্যয়কর প্রভাব রাখবে না এবারের লকডাউন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন গত মার্চে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে তখনকার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই তিনি নিজের সমর্থন প্রমাণের জন্য বড় চাপে রয়েছেন। অনেকে বলেন, পার্লামেন্টে অনেক কৌশলে তিনি নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ তার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কারণ করোনার উসিলায় একবার লকডাউন বা জরুরি অবস্থা দিয়ে দিলে অন্য সবকিছুর সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও বন্ধ করা যায়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে তিনি যত দমিয়ে রাখতে পারবেন ততই তার জন্য ভালো। কারণ বিরোধী দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে তাকে সমর্থন করেন পর্যাপ্তসংখ্যক এমপি। ফলে তিনি সরকার গঠন করতে পারেন। এরপর রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। ফের রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দেয় কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশটিতে। এতে ক্ষমতা হারানোর ভয় চেপে বসা অস্বাভাবিক নয় মুহিদ্দিনের।