বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কথাটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। বিজ্ঞানের দান অনস্বীকার্য।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমন কেড়েও নিয়েছে অনেক কিছু। আজ আলোচনা করব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দান ও কেড়ে নেওয়া নিয়ে। তবে তার আগে আসুন জেনে নেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কি?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিঃ
আমরা অনেকেই
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে
একসাথে সঙ্গায়িত করে আউলাইয়া ফেলি। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কি এক? এটা সত্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত কিন্তু এক না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে কিছু চিহ্নিত পার্থক্য। বিজ্ঞান হল আমাদের চারপাশ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া কিংবা জ্ঞানার্জন করা। বিজ্ঞান বিষয়ে যিনি গবেষণা করেন তিনিই বিজ্ঞানী। আর প্রযুক্তি হল বিজ্ঞানের অর্জিত জ্ঞানকে মানুষের উপকারে ব্যবহারের উপযুক্ত করা। আর যিনি প্রযুক্তিকে মানুষের কল্যাণের ব্যবহার উপযোগী করেন তিনি
প্রযুক্তিবিদ
।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারঃ
- ডিনামাইট
- কম্পিউটার/ল্যাপটপ
- মোটর ইঞ্জিন
- মোবাইল-ফোন
- বিদ্যুৎ
- রোবট
- ফেইসবুক
- ৩৬০ ডিগ্রি সেলফি
- রাডার
- মেডিসিন
- টেলিস্কোপ
- এনিমেশন
- বেতার
- মুদ্রণ-যন্ত্র- ইত্যাদি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন আবিষ্কার কি দিয়েছে আমাদেরঃ
- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
- কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়ন
- বিজ্ঞান ও প্রয্যুক্তির বদৌলতে যেকোন কাজ আজ আমরা করতে পারি খুব সহজেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করেছে সহজ। পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। আজ আমরা ঘরে বসেই জানতে পারি পৃথিবীর শেষ প্রান্তের খবর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বদৌলতে কমে গেছে মৃত্যু হার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কি দিয়েছেই আমাদের?কেড়ে নেয় নি কিছু? হ্যাঁ! কেড়ে নিয়েছে আমাদের সময়। মানুষকে বানিয়েছে রোবট। মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ, মনুষত্ব আজ বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের করে দিয়েছে যান্ত্রিক।
তবে আসুন জেনে নেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে কি হাড়িয়েছি আমরা-
-
ছেলেবেলাঃ
আমাদের বাপ-দাদাদের ছেলেবেলার গল্প শুনলে চমৎকৃত হই। দুষ্টমিই পূর্ণ কি আনন্দেরই না ছেলেবেলা। তাদের ছেলেবেলা যেখানে কেটেছে পুকুরে দাপাদাপিতে, এ মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে খেলাধুলা করে। আর আমাদের ছেলেবেলা আটকে গেছে একটি বদ্ধ রুমে। কম্পিটারে গেইম খেলে, ফেইসবুকিং করে কেটে যায় আমাদের সময়। -
সময়ঃ
আজকে প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা এতটাই ব্যাস্ত হয়ে গেছি যে, আজ আমাদের নিজেকে দেওয়ার মতই সময় নেই। দেখা যায় একই পরিবারের মানুষ, একই বাড়িতে থেকেও বেশীর ভাগ সময় কথা হচ্ছে মোবাইলে, চ্যাটিং করে। -
মানবিকতার হ্রাসঃ
দিনদিন প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে আমাদের ভেতর থাকা মানবিকতার হ্রাসও চোখে পড়ার মত। এখন আমরা রাস্তায় অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখলে আগে সেলফি তুলি, ভিডিও করে ফেইসবুকে আপ দিয়ে দায়িত্ব সম্পাদন করি। কিন্তু কিছু বছর আগেও এমন ছিলো না। -
আবেগঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে অপর মানুষের প্রতি আবেগ আমাদের শূন্যের কৌঠায়। -
নৈতিকতা বৃদ্ধিঃ
প্রযুক্তি যখন হাতের মুঠোয়, নৈতিকতা সেখানে নেই বললেই চলে। দিনদিন অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সাইবার ক্রাইম ছাড়াও অনলাইন ব্যবহার করে কিছু অসাধু মানুষ তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করে চলছে। -
দৃষ্টি-শক্তিঃ
সারাক্ষণ ফোন ও ল্যাপটপের স্কৃণে তাকিয়ে থাকায়, আমরা অকালেই হারাচ্ছি আমাদের দৃষ্টিশক্তি -
প্রাণ-চঞ্চলতাঃ
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ফলে আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রাণ-শক্তি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের একটা অংকে গ্রাস করছে বিষন্নতায়। বাড়ছে আত্মহত্যা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদিও কিছু অসাধু চক্র তাদের অসৎ কর্ম সাধন করে চলছে কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কার অস্বীকার করার মত নয়। আশাকরি মানুষের কল্যাণে, ক্ষতির জন্য নয়। আমার আপনার ব্যবহারের উপরেই নির্ভর করছে প্রযুক্তির ভালো দিক ও মন্দ দিকের সফলতা।
ধন্যবাদ সবাইকে।