কোকা-কোলা-পেপসি, বোয়িং-এয়ারবাস ও ম্যাকডোনাল্ড-বার্গার কিংয়ের মতো বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বিষয় খুব মিল রয়েছে। এ ধরনের ব্যবসা হওয়ায় তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে।
এদিক থেকে
ফেসবুক
ও
অ্যাপলের
মধ্যে কোন্দল কৌতূহলের জন্ম দেয়। শুধু টেক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যটি স্মার্টফোনের জগতে আধিপত্য বিস্তার করা এ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক আচরণ বাড়ছে। খবর বিবিসি।
ফেসবুকের প্রায় সব রাজস্ব আসে বিজ্ঞাপন থেকে। তবে অ্যাপল বিজ্ঞাপন থেকে সামান্য আয় করে, যার বেশির ভাগ ডিভাইস ও এর অ্যাপ স্টোর থেকে আসে। সংস্থা দুটি ঠিক একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না; প্রকৃতপক্ষে তারা একে অন্যকে পছন্দ করে না।
বছরের পর বছর ধরে অ্যাপলের টিম কুক বলে আসছেন, বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ উপার্জন করতে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের একটি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে। আর তাদের গোপনীয়তা চালাক ও অসাধু আচরণের সঙ্গে যুক্ত।
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, অ্যাপলের পণ্য ব্যয়বহুল এবং ফেসবুকের সমালোচনা করার পেছনে তাদের গোপন উদ্দেশ্য আছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে অ্যাপল ঘোষণা করেছিল, তারা অ্যাপ ট্র্যাকিং ট্রান্সপারেন্সি নামে একটি নতুন ফিচার চালু করবে। এর মাধ্যমে আইফোন ব্যবহারকারীরা তাদের ডাটাগুলোকে আরো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিস্ময়কর লাভ করা ফেসবুকের জন্য এটি একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। খোলামেলাভাবেই তারা জানায়, এটি তাদের ব্যবসার ক্ষতি করবে। ডেভেলপারদের প্রস্তুত করতে সময় দেয়ার জন্য অ্যাপল প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত করেছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, অ্যাপল তাদের বাজারের প্রভাবশালী অবস্থানটি ডাটা সংগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ তাদের প্রতিযোগীদের জন্য একই ডাটা ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা এটিকে গোপনীয়তা হিসেবে দাবি করলেও এটি মূলত লাভের বিষয়।
সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী এবং ফেসবুক ও এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে সমালোচনা করা একটি বইয়ের লেখক রজার ম্যাকনামি বলেন, অ্যাপলের সংস্কৃতি তার গ্রাহকদের ক্ষমতায়ন করা। অন্যদিকে ফেসবুকের সংস্কৃতি ব্যবহারকারীদের শোষণ করা।
এখন প্রশ্ন হলো অ্যাপল কি আসলেই প্রতিযোগীদের দমিয়ে রাখতে বাজারের আধিপত্য ব্যবহারের চেষ্টা করছে? অ্যাপলের বিজ্ঞাপন ব্যবসা তুলনামূলক ছোট হলেও বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা মরগান স্ট্যানলি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, বিজ্ঞাপন থেকে আয় আগামী কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং অ্যাপল কি নিজের বিজ্ঞাপন ব্যবসার জন্য ফেসবুককে ব্যবহারকারীদের ডাটা নেয়া বন্ধ করতে চায়? বুদ্ধিগতভাবে এটি অদ্ভুত হবে।
শরতে যুক্তরাষ্ট্রের টিভি বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন হলো অ্যাপলের গোপনীয়তার প্রচার। যেমন ‘কিছু জিনিস শেয়ার করা উচিত নয়—আইফোন আপনাকে এটি করতে সহায়তা করতে পারে’। সুতরাং অ্যাপল খুব ভালোভাবেই জানে যে গোপনীয়তা জনপ্রিয়, এটিকে অবহেলা করা উদ্ভূত হবে।
একে অন্যকে অবজ্ঞা করলেও দুটি সংস্থার সহনির্ভরতা রয়েছে। ফেসবুক (হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্ট্রাগ্রামসহ) না থাকলে অনেক গ্রাহকের কাছে আইফোনের আবেদন কমে যাবে। আবার লোকেরা যদি তাদের আইফোনে ফেসবুক ব্যবহার করতে না পারে, তারা হয়তো অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সন্ধান করবে। এজন্য উভয় সংস্থার মধ্যে একটি সুস্থ, দৃঢ় ও কার্যকরী সম্পর্ক থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক।
অ্যাপল বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিনা মিলানেসি এমন অনেকের মধ্যে একজন, যারা বিশ্বাস করেন দুটি সংস্থা কেবল বিশ্বকে ভিন্ন উপায়ে দেখবে এবং তাদের মধ্যে বৈরিতা সংস্কৃতিগত ও ব্যক্তিগত। দার্শনিকভাবে এটি একেবারেই আলাদা। আপনি অ্যাপলের দিকে তাকান, ফেসবুক তাদের গ্রাহকদের বিরুদ্ধে কেমন আচরণ করছে, তা যদি তারা দৃঢ়ভাবে অনুভব করে তাহলে অ্যাপল ডিভাইসে ফেসবুক কেন থাকবে?
প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নকল যুদ্ধ ছিল। তাদের সম্পর্কটি আসলে সহাবস্থানীয়। তবে অ্যাপল এখন যা প্রস্তাব করছে, তা কিন্তু নকল যুদ্ধ নয়। এটি নিয়ে কোনো ভুল করলে চলবে না। গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তা ফেসবুকের জন্য ভালো নয়। অ্যাপলের নতুন নিয়মগুলো সামাজিক নেটওয়ার্ককে আঘাত করবে।
যদিও টেক জায়ান্টগুলোর প্রতিযোগিতায় ফেসবুক বনাম অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা খুবই কম। গুগল ফেসবুকের স্পষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী; অ্যাপলের কাছে মাইক্রোসফট ও গুগল একইভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ও অ্যাপলের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, যা শেষ হবে না। ২০২১ সালে সম্ভবত এ দ্বন্দ্ব আরো বৃদ্ধি