প্রযুক্তির ৫ টি নেতিবাচক প্রভাব যা মানুষের জীবনের জন্য ক্ষতিকর

TechtunesBd

আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিতে আবদ্ধ। প্রায় প্রতিটি পরিবার একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশন ইত্যাদির মালিক, এগুলি আমাদের জীবনকে সহজ করে তোলে ও তুলছে।

মূলত মানবতার প্রতি বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য তৈরি, ডিজিটাল ডিভাইসগুলিও আমাদের জীবনে তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব প্রকাশ করেছে।

অনেক গবেষণা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে প্রযুক্তির অত্যধিক এক্সপোজারের কারণে আমাদের শারীরিক, সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভুগছে। আসুন, আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবগুলি সম্পর্কে জেনে নেই।


প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব: সেগুলি কী?


সামাজিক দক্ষতা

প্রযুক্তিগত সলিউশনগুলির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে সামাজিক দক্ষতা বা সোশ্যাল স্কিল খারাপ হতে পারে। ব্যবসায়িক মিটিংগুলি স্কাইপ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় এবং বাচ্চা বা বুড়ো ব্যক্তিগতভাবে কোনও বন্ধুর সাথে দেখা করার পরিবর্তে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে।

প্রযুক্ত বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরি করে যার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এর ফলে সরাসরি দেখা করা বা কথা বলার চেয়ে আমরা প্রযুক্তিতে বেশি নির্ভর করছি।

ফলস্বরূপ, লোকেরা একাকী ও হতাশাগ্রস্ত বোধ করতে পারে। আমরা আমাদের নিজস্ব পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অভ্যাস পেয়েছি এবং প্রযুক্তির স্মার্ট স্ক্রিনকেই আমরা আমাদের পৃথিবী মনেকরি।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যখন অনলাইন যোগাযোগের সাথে বাস্তব-জীবনের মিথস্ক্রিয়া প্রতিস্থাপন করি তখন আমরা কণ্ঠস্বরের সুর, মুখের ভাব, দেহের ভাষা এবং সরাসরি কথা বলার মতো সামাজিক সূত্রগুলি পড়ার ক্ষমতা হারাতে পারি।


দেখে নিন যে ৬ টি বিষয়ে কারনে গরম হয় আপনার মোবাইল ফোনটি। না দেখলে সত্যি মিস্।

সর্বোপরি, হিংসাত্মক গেমস এবং ভিডিওগুলি আমাদের মনুষ্যত্বকে হত্যা করে এবং ব্যক্তির জীবনে ধ্বংস এনে দেয়।


শিক্ষা

ইন্টারনেট বর্তমানে শিখার এক দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। আপনি লাইব্রেরিতে সময় ব্যয় করার চেয়ে বা আপনার বাড়ির বাইরে না গিয়ে অথবা বিভিন্ন কোর্সে অংশ নেওয়ার চেয়ে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য গুগল থেকে শিখতে পারেন।

এর ফলে আমরা অনেকেই শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগী হয়ে থাকি যা স্পষ্টতই নেতিবাচক উপায়ে শেখার প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করে।

এর ফলে বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা হ্রাস পায় এবং পরিক্ষায় চৌর্যবৃত্তি ও প্রতারণা বাড়ছে। এটি তরুণ প্রজন্মের চিন্তা ক্ষমতাকে বিপদে ফেলেছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে শিক্ষার্থীরা যত বেশি বিনোদন প্রযুক্তি যেমন গেমস বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তত কম তারা একাডেমিকভাবে পারফর্ম করে। বাড়ির কাজ পড়া এবং করার পরিবর্তে আধুনিক বাচ্চারা বিনোদনে লিপ্ত হয়।

অনলাইনে বেশি সময় কাটানো, ফেসবুক চ্যাটিং, ইউটিউব ভিডিও দেখা বা অন্যান্য কাজ শিক্ষার্থীদের খারাপ রেজাল্টে সহায়তা করে।


শারীরিক প্রভাব

প্রযুক্তির সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রভাবগুলির মধ্যে হ’ল স্থূলত্ব। বেশিরভাগ মানুষ ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন দ্বারা আবর্তিত হয়ে গেলে তারা খাবার দাবার এর কথা ভুলে যায় এবং কম শরীরচর্চা করে।

আপনি যত বেশি সময় পিসির সামনে বসবেন, আপনার শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালন কম হবে, ঘাড় এবং মাথায় ব্যথা অনুভব হবে। অধিক সময় পিসি বা ল্যাপটপ এর সামনে কাটানোর ফলশ্রুতিতে বহু লোকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে পড়ে।

স্মার্ট স্ক্রিনে অবিচ্ছিন্নভাবে তাকানো মাথা ব্যথা এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার কারণ হতে পারে। রাস্তাঘাটে ফোনে কথা বলা বা হেডফোন দিয়ে গান শুনার কারণে ইতিমধ্যে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও হেডফোনগুলিতে জোরে গান শুনা আপনার শ্রবণশক্তি হ্রাস করতে পারে।


প্রাইভিসি ও সিকিউরিটি

যদি প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রযুক্তি আপনাকে বিভিন্ন ঝুঁকির সামনে ফেলতে পারে। বিশেষত বাচ্চারা দুর্বল। এক রিসার্চে বলে হয়েছে, প্রতি তিনজন কিশোরের মধ্যে একজন সাইবার বুলিংয়ের শিকার।

অপরাধীরা লক্ষ্য অর্জনে টেক্সট মেসেজ, সামাজিক মিডিয়া বা ফোরাম ব্যবহার করে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন যৌন অপরাধ সংঘটিত হয়। মানুষের গোপনীয় বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুজ দ্রুততর সহিত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে।

৩৯% কিশোর-কিশোরীরা অশালীন বা অশ্লীল মেসেজ সেন্ড করে থাকে ও প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরীরা নগ্নতা সম্বলিত মেসেজ পেয়ে থাকে।


মোবাইল গরম হওয়া থেকে কিভাবে রক্ষা করবেন।

গোপনীয়তার সীমানা অস্পষ্ট হওয়ার কারণে কারও ব্যক্তিগত তথ্য সন্ধান করা আজ আগের চেয়ে সহজ। কিছু মাধ্যম ব্যবহার করে আপনি কয়েকটি ক্লিকের সাহায্যে এখন সমস্ত যোগাযোগের তথ্য, ছবি, অবস্থান এবং আরও অনেক কিছু দেখতে পারেন।

এই গতকাল একটি রিপোর্টে উঠে আসে প্রায় ৪২ কোটি মানুষের ফেসবুকে ব্যবহার করা পারসোনাল ফোন নাম্বার ফাঁস হয়। এছাড়াও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা বিভিন্ন সফটওয়্যার বা ফাইল এর মধ্যে থাকতে পারে ক্ষতিকারক ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার।

যা নিমিসেই আপনার ডিভাইসের সব তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম!


মানসিক সাস্থ্য

প্রযুক্তির সর্বাধিক নাটকীয় প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হ’ল পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়া এবং এর পরিমাণ হ্রাস পাওয়া। ঘুমের রাসায়নিক মেলাটোনিন পর্দা থেকে ধ্রুবক আভা দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং প্রযুক্তির সংস্পর্শে থাকা আপনার ঘুমের সাথে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং আপনার সাধারণ অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে বা করে।

এর চেয়েও মারাত্মক বিষয় হ’ল লোকেরা প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে যায় যার ফলে এটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে এবং সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধনগুলি ধ্বংস করে বা ধ্বংস করতে সক্ষম।

কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট অন্যান্য মানসিক সমস্যার মধ্যে একটি নতুন ধরণের স্ট্রেস হ’ল ক্রনিক স্মার্টফোন স্ট্রেস। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আর এখকম বেশ কয়েকমাস চলতে থাকলে আপনার ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক রোগ হতে পারে।


মোবাইল ফোন রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

অতিরিক্ত তথ্য স্থান, অতিরঞ্জিত অনলাইন বাস্তবতা, ইন্টারনেট অতিরিক্ত ব্যবহার এই সমস্ত কারণ আপনাকে মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আর মানুষিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনার কি কি শারীরিক ক্ষতি হবে তা নিশ্চই আপনাদের বলে দিতে হবে না।


বাচ্চাদের উপর প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব কীভাবে হ্রাস করা যায়

উপরিউক্ত ঝুঁকি এড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা যারা পিতামাতা আছি তারা গ্যাজেটগুলির ব্যবহার সংযত করতে পারি এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাত থেকে দূরে রাখতে পারি।

বাচ্চাদের দীর্ঘসময় ধরে কোন স্মার্টস্ক্রিনের সামনে রাখবে না। শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের থেকে মোবাইল অবশ্যই দূরে রাখবেন। অনেক শিশু আছে যারা স্মার্টফোন হাতে না থাকলে খাবার খায় না। কিন্তু সাবধান, শিশুদের কোমল শরীরে রেডিয়েশন এর প্রভাব খুব তাড়াতাড়ি পড়ে।

সৌজন্যে:

WizBd.Com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *