কাদের মির্জা ও খোকনের কর্মকাণ্ডে বিব্র্রত আ.লীগ

Bonikbarta

দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিব্রত বোধ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। সাম্প্র্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জার নিজ দলের সংসদ সদস্য জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্য বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এই রেশ না কাটতেই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে অবতীর্ণ হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

গত এক সপ্তাহ দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছেন আবদুল কাদের মির্জা। তার বিভিন্ন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তিনি বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিনচারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা টোয়াই পাইতো (খুঁজে পাবে না) এটাই হলো সত্য কথা। বড় ভাইকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তার (ওবায়দুল কাদের) ওপরও আমার ক্ষোভ আছে। এখানে জিততে হলে তার আমাদের লাগবে। সামনে জিততে হলে তাকেও সতর্ক হতে হবে। এত সহজ নয়, কঠিন ব্যাপার। বউটউ (স্ত্রী) সামলাতে হবে। আর তার সঙ্গে যারা হাঁটেন, তারা কার থেকে মাসোয়ারা পান, তার খোঁজখবর নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় দুই নেতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাকে উন্মাদ বলা হয়েছে। গোপালগঞ্জের ৯৯ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন। সেখান থেকে এক নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি মন্ত্রী নেই। তিনি কী কী অনিয়ম করেছেন, তা সবাই জানেন। তাই তিনি এবার মন্ত্রী হতে পারেননি। আরেকজন নেতা বলেন, আমার নাকি দায়িত্বশীলতার অভাব আছে।

এদিকে শনিবার রাজধানীর হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে সাঈদ খোকন বলেন, তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করছেন। তার মতো রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। তিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন। এই টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে তিনি কোটি কোটি টাকা লাভ করেছেন এবং করছেন। তাই প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার আগে নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। তাপস মেয়র থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার বক্তব্য সম্পর্কে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, তার ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে তিনি যা বলছেন, তা তার নিজস্ব কথা। ব্যাপারে দলগত জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কোনো কিছুই নেই। এটা তার নিজস্ব আত্মোপলব্ধির বিষয়। স্বাধীনতার দায়িত্ব তার নিজস্ব বিষয়, আমাদের দলীয় কোনো বিষয় না। এর দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। দলের সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব থাকলে দল পরবর্তী সময়ে চিন্তাভাবনা করে ব্যবস্থা নেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, তাদের পেছনে অন্য কোনো শক্তি আছে কিনা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কার ভেতরে কী আছে, কোথায় কী থাকতে পারে, তা তো সময়ই বলে দেবে। কিন্তু ততক্ষণে যে ক্ষতিটা হয়ে যাবে, সেটা যদি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, তার দায়দায়িত্ব কে বহন করবে?

তবে ওই দুই নেতা এমন কোনো পর্যায়ে এখনো পৌঁছায়নি যে তাদের নিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। তারা এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেই। নিজের অবস্থান সম্পর্কে তারা নিজেরাও জানে। কারো অতীতের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষ কিন্তু সবই জানে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে আমি প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। বিষয়টা আমি এভাবে বলতে চাই, সেটা হলো আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে দলীয় বিষয়ে সমালোচনা, আলোচনা পর্যালোচনা তো থাকতেই পারে। ভেতরের বিষয় দলের ভেতরেই আলোচনা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের দলীয় ফোরামে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগে সেটার প্রচলন আছে। সেখানে বলাটাই সমীচীন ছিল।

নাছিম আরো বলেন, যেখানে সেখানে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অথবা পথে দাঁড়িয়ে যারাই নানা বক্তব্য দিচ্ছেন বা দেয়ার চেষ্টা করছেন, আওয়ামী লীগের একজন হিসেবে আমি বলব, দলের জন্য এটা শুভকর কিছু নয়। আমরা এতে বিব্রত বিরক্ত। যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। আমাদের সংযত হওয়া দরকার, সংযত আচরণ প্রদর্শন করা দরকার।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দুই নেতার এমন কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। আমি আশা করব, দুটি বিষয়ের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তারা সংযত হবেন। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলবেন। মানুষের অনেক কথা থাকতে পারে, সেটি দলীয় অভ্যন্তরে তারা বলতে পারেন এবং বলবেন বলে আমি আশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *