আজকের এই পোষ্টে আমরা আলোচনা করব “অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস রুট কি : রুট করার সুবিধা এবং অসুবিধা কি কি?” এবং রুটেড অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সুবিধা এবং অসুবিধা সমূহ কি । কেন আপনি রুটেড ফোন ব্যবহার করবেন আর কেনই বা করবেন না ।
অ্যান্ড্রয়েড রুট কিঃ
অ্যান্ড্রয়েড রুট একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রাহক সম্পূর্ণ ভাবে তার ফোনটি কন্ট্রোল করতে পারবে।
আপনি ডিভাইসটি নিজের ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারবেন যদি আপনি আপনার ডিভাইস রুট করে নেন ।
রুটিং মানে হচ্ছে স্পেশাল একটি সুবিধা গ্রাহকের জন্য । এটি ফোনের এক রকম সকল প্রোগ্রামকে কন্ট্রোল করে । এটি ফোনের টোটাল উইন্ডজটিকে কন্ট্রোল করে ।
রুট করার পর কি করবেনঃ
রুট করার পর কি করবেন? আপনি আপনার পছন্দের মোড’স, কারনেল, কাস্টম রম ইন্সটল করতে পারবেন। আপনি চাইলে অ্যান্ড্রয়েড এর লেটেস্ট ভার্সন ইন্সটল করতে পারবেন ললিপপ আপডেট (যেমন আপনি চাইলে এন্ড্রইড পাই ৮.১ ব্যাবহার করতে পারবেন আপনার ফোনে)।
রুট করার সুবিধা সমূহঃ
আপনি আপনার ফোনের ভাল পারফরমেন্স এর জন্য সিপিএউ এবং জিপিএউ অভারলক করতে পারবেন। রুট করার ফলে আপনি যেকোনো ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে আপনার পছন্দমত ফোনটি আপডেট করতে পারবেন ।
আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ এর জন্য আপনি সিপিইউ অভারলক করে রাখতে পারবেন। এর জন্য আপনি আপনার ফোনের ব্যাকআপ, রেস্টর অথবা বিচ আপ্লিকেশনগুলো আলাদা ভাবে রি-ইন্সটল করে রাখতে পারবেন।
মোট কথা, এর ফলে আপনি আপনার ইচ্ছে মত প্রয়োজনীয় জিনিষ গুলো ইন্সটল করে ব্যবহার করতে পারবেন ।
জেলব্রেক থেকে রুটিং এর ভিন্নতাঃ
অনেকেই রুটিং এবং জেলব্রেক একই ব্যাপার ভেবে প্রতারিত হন । কিন্তু সত্যিকার অর্থে জেলব্রেক এবং রুটিং দুইটি ভিন্ন ব্যাপার। দুইটির কনসেপ্ট দুই ধরনের ।
জেলব্রেক আসলে অ্যাপেল এর জন্য প্রযোজ্য। এই মডেলের মধ্যে জেলব্রেক অপারেটিং সিস্টেম মডিফাইং করতে পারে (ইনফরমেশন বাই “লকড বুটলোডার”)।
এটি গ্রাহককে অ-অনুমদিত এপ্লিকেশন সমূহ ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে থাকে । এই সুবিধা সমূহ কিছু কিছু মডেলের অ্যান্ড্রয়েড এর মধ্যে থাকে । যেমনঃ সনি, আসুস এবং গুগল এই টাইপ এর মডেলের অ্যান্ড্রয়েড এর মধ্যে এই সুবিধা টি রয়েছে ।
এদের আর একটি বিশেষ গুন হচ্ছে এই মডেলের অ্যান্ড্রয়েড গুলো তাদের ডিভাইস গুলো আনলক করতে পারে এমনকি স্থানান্তরিত করতে পারে ।
জানুন অ্যান্ড্রয়েড রুটিং কি,এর সুবিধা ও অসুবিধা!
রুট করার পর কি করবেন: রুট করার পর করনীয়
আপনার ফোনের কারেন্ট রমের একটি ব্যাকআপ তৈরি করা। ব্যাকআপ নেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে যেকোন একটি কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করা। যেমন TWRP recovery, Orange Fox recovery etc.
সংক্ষেপে রিকভারি হচ্ছে ফোনের একটা বুট-মোড যেখান থেকে আপনি ফোনের পুরো পার্টিশন ফরম্যাট করতে পারবেন কিংবা আপনার ফোন পুরো অপারেটিং সিস্টেম বা রোম ব্যাকআপ নিতে পারবেন,
অথবা
মেমোরি কার্ডে থাকা uযেকোন রোমকে তার .zip ফাইল দিয়ে ফোন আপডেট করতে পারবেন।
রুটিং এর সুবিধা কি ? কি কারনে রুটিং এর ব্যবহার ব্যাপক:
১। লুকানো বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করাঃ আপনি ইচ্ছে করলে আপনার ফোনের বেমানান অ্যাপস গুলো আনলক করতে পারবেন ।
২। এন্ড্রএড ডিভাইস এর মাধ্যমে ওয়াই-ফাই হ্যাক করাঃ আসলেই এটি সত্যি। আপনি চাইলেই আপনার অ্যান্ড্রয়েডটি দিয়ে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ডিভাইস টি হ্যাক করতে পারবেন। এমন কি আপনি চাইলে ওই নেটওয়ার্কের কানেক্ট থাকা যেকোনো ইউসার কে আপনি নেটওয়ার্কের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন ।
“ওয়াই-ফাই” একটি অ্যাপ্লিকেশান নেটওয়ার্কের হ্যাকিং এর জন্য ।
৩। আপনার মোবাইলের প্রসেসর অভারলক করাঃ আপনি আপনার মোবাইলের প্রসেসর এর গতি বাড়াতে পারবেন। কিন্তু এটি প্রসেসর এর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ । তাই এর আগে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে রাখা উচিৎ ।
৪। ব্লক এডস ফ্রম অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসঃ আমাদের অনেকের ফোনেই অনেক অবাঞ্চিত এডস আসতে থাকে। যা কিছু কিছু গ্রাহকের কাছে খুবি বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায়। এ সমস্ত বিরক্তি থেকে রুট অ্যাপ্লিকেশনটি আপনাকে দেবে মুক্তি ।
আপনি রুট করে এডস ব্লক দিয়ে রাখলে আপনি পাবেন এই অবাঞ্চিত ঝামেলা থেকে মুক্তি। এই ব্যাপারে র্যটিং এর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ব্যাপক ।
৫। আপনার ডিভাইস এর র্যাম বৃদ্ধিঃ রুটিং আপনার ডিভাইসটির ডাটার ঘনত্ব বিপর্যয় কমিয়ে এর জায়গা বৃদ্ধি করে । রুটিং এর ফলে আপনি এই সুবিধা টি পাবেন আপনার অ্যান্ড্রয়েডটিতে ।
৬। বিভিন্ন ধরনের রম’স, মুড’স, কারনেলঃ আপনি ইচ্ছে করলে বিভিন্ন ধরনের রম’স কারনেল এবং মুড’স ইন্সটল করতে পারবেন। অবশ্য এই তা তখনি করতে পারবেন যখন রুটিং ডিভাইস টি ইন্সটল করা থাকবে ।
অ্যান্ড্রয়েড একটি সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যাপ্লিকেশন মোবাইল ডিভাইস হিসেবে এবং সর্বজন নির্ধারিত ।
৭। ব্যাটারির বুস্ট লাইফের জন্য আন্ডারলক সিপিইউঃ আপনি আপনার ফোনটির ব্যাটারির আরও বেশি টেকসই এর জন্য আপনি আপনার সিপিইউটিকে আন্ডারলক করে রাখতে পারবেন ।
৮। আপনার ফোনে যদি কোন অফিশিয়াল রোম থাকে যেমন Xiaomi এর MIUI, One plus এর Oxygen Os, এগুলাতে আপনি বোরিং হয়ে গেলে আপনি চাইলেই রুটের পর যেকোন কাস্টম রোম আপনার ফোনে ব্যাবহার করতে পারবেন যেমন ধরেন আপনি Xiaomi User আপনি চাইলেই কিন্তু গুগোলের পিক্সেল রোম ব্যাবহার করতে পারবেন না, কিন্তু আপনি রুট করলে সহজেই MIUI থেকে Pixel Experience Rom ইন্সটল করে সহজেই আপনি পিক্সেল এর মজা নিতে পারবেন যেমনটা আমি নিজেই করেছি 😛
দেখুনঃ
কিভাবে আপনি আপনার ফোনে Pixel Experience Rom Install করবেন
রুটিং এর অসুবিধা সমূহ:
১। ব্রিকিংঃ রুটিং হল একটি ড্রেডেড শব্দ । এটি ইন্সটল থাকলে আপনার ফোনটিতে কোন বড় সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন না । আপনি যদি এটি কোন ব্যাবসায়িক কাজে ব্যবহার করেন তবে এটি দিয়ে আপনি লাভবান হবেন না ।
এমন কি যদি এটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি গোচর হয় তবে এর জন্য আপনাকে জরিমানা দিতে হতে পারে । কোন বড় কাজে বা ব্যাবসায়িক কাজে এর সুফল তেমন নেই ।
২। মোবাইল রুট করলে কি হয় : এটি ব্যবহার এর সাথে সাথে আপনার ফোনের ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যাবে কারন এর পর আপনি আর কর্তৃপক্ষকে এই টা দেখাতে পারবেন না । আপনি এই রুটিং বন্ধ করেও যদি ফোনটিকে ওয়ারেন্টিতে পাঠান তাতেও কোন লাভ হবে না ।
কারন, রুট একবার ইন্সটল করা হলে এর পরে আর এর ডিভাইস আগের মত থাকে না । তাই এর ব্যবহারের সাথে সাথে আপনার ওয়ারেন্টির কথা ভুলে যেতে হবে।
৩। সিকিউরিটি রিস্কঃ রুটিং ব্যবহারের ফলে আপনার ফোনটি সিকিউরিটি রিস্কে পরে যাবে। কারন রুটিং ইন্সটলের সাথে সাথে আপনার আপনার ডিফল্ট সেটিংস চেঞ্জ হয়ে যাবে ।
তাই এর সিকিউরিটি আগের মত থাকবে না ।
যার ফলে আপনার ফোনটি একটি সিকিউরিটিহীন অবস্থায় পরবে । আর এতে আপনার একটি ফোনের উপর নির্ভর করে অনেক বড় বড় সমস্যা হতে পারে যা আপনি হয়ত কল্পনাও করতে পারবেন না ।
তাই আমাদের উচিত মোবাইল রুট করলে কি হয় এর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা তৈরি করা। কারন, তা না হলে অজ্ঞতার কারনে অনেক বড় বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যা কি না আপনি ধারনাও করতে পারবেন না।
তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এর সুবিধাও ব্যাপক। যা অন্য কোন অ্যাপ আপনাকে দিতে পারবে না।
অনেক সময় আমাদের ছোট ছোট কিছু ভুলে ঘটে যায় বড় বড় দুর্ঘটনা। আবার অনেক সময় না জানার কারনে অনেক আপডেট অ্যাপ সম্পর্কে ধারনা না পেয়ে আমরা পরে থাকি এনালগ জগতে।
তাই মোবাইল রুট করার পদ্ধতি এর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকাও অত্যন্ত জরুরি ।এখানে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছ । সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই আলোচনা টি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।
Note: আমরা যারা Android ফোন ইউজ করি আমাদের ফোনে তিন ধরনের রম থাকে :
১. স্টক রম
২. কাস্টম রম আপনার ফোনে আপডেট দিতে অবশ্যই আপনার ফোন রুটেড হতে হবে। কিংবা আপনার ফোনের বুটলোডার আনলক থাকতে হবে যা অফিসিয়াল ফোন গুলোর বুট লোডার লক থাকে সব সময়।
কাস্টম রম সম্পর্কে ডিটেইলস দেখুন এখানেঃ
কাস্টম রম বাই টেকটিউন্স
৩. সাইনোজেন মোড
আশা করি রুট সম্পর্কে একটা মুটামুটি ধারণা আপনারা পেয়েছেন আমার এই পোষ্ট থেকে, কারোর কোন জিজ্ঞাসা থাকলে এখানে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা টেক্টিউন্স ডেস্কে গিয়ে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমাদের এক্সপার্টরা আপনাকে সহযোগিতা করবে যথাসম্ভব, সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, এবং টেকটিউন্সের সাথেই থাকবেন।।